সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের থানাসংলগ্ন সর্দারপাড়া ও ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার মধ্যে টানা তৃতীয় দিনের মতো দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। গত শুক্রবার শহরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রোডে পদ্মার পাড়া মহল্লার এক যুবককে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সংঘর্ষের উত্তেজনা রোববারও ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ।
সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত উভয় মহল্লার অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। থানাসংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশও চরম বিপাকে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন মহলে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী জোয়ার্দার ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজের সমর্থকদের মধ্য বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর থানা মোড় এবং পাসপোর্ট অফিস সড়কে ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে দুই পক্ষ অবস্থান নেয়। থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়।
শনিবার সকালে পাসপোর্ট অফিস সড়কে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর ১২টায় থানা রোডসংলগ্ন আব্দুল মান্নান রোডে তা ছড়িয়ে পড়ে। চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
রোববার বেলা ১১টার দিকে আবারও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পাসপোর্ট অফিস রোড ও আব্দুল মান্নান রোডে। অফিস সময় ও পরীক্ষার দিনে সংঘর্ষের কারণে শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে পাসপোর্ট অফিস রোডের একটি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। টানা তিন দিনের এই উত্তেজনায় সর্দারপাড়া, ভাঙ্গাবাড়ি, চিড়ার মিল, থানা রোড, পাসপোর্ট অফিস রোডসহ আশপাশের এলাকায় ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়।
এক নম্বর ট্রাফিক ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তাজমিলুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষ থামাতে সদর থানা পুলিশের পাশাপাশি আমরাও মাঠে আছি।’
সদর থানার ওসি মোকলেসুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সর্দারপাড়া গ্রামের আলী জোয়ার্দার বলেন, ভাঙ্গাবাড়ির লোকজন পুলিশের সামনে রামদা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। তিন দিন ধরে চলা সংঘর্ষে আমাদের পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ বাহিনী ও বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে আগামীকাল বিকেলে আমাদের হোসেনপুরে ডেকেছে। সেখানে মীমাংসা বৈঠক বসার কথা রয়েছে।’
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও ভাঙাবাড়ির জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, কয়েক যুবক মুক্তিযোদ্ধা গলিতে বিরিয়ানি হাউসের ভেতর মারামারি করে। ওই ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়। সংঘর্ষে আমাদেরও ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। মীমাংসার জন্য ইএনও ডেকেছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টানা কয়েকদিনের সংঘর্ষে পুলিশ ও প্রশাসন বিব্রত। উভয় পক্ষকে সোমবার অফিসে ডাকা হয়েছে।’
